মি. আওলাদ হোসেন পৈতৃকসূত্রে ৩ বিঘা জমি পেলেন। তার জমির অবস্থানের পার্থক্যের কারণে উর্বরতাও ভিন্ন হয়। এতে তার জমির প্রাপ্ত আয়ও ভিন্ন হয়। তার বন্ধু জাহেদুল ইসলাম রবি শস্যের সময় ট্রাক্টর ও পানির সেচ মেশিন ভাড়া দিয়েও কম সময়ের মধ্যে প্রচুর আয় করে থাকেন।
উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ফলে জমির চাহিদা বাড়লেও ভূমির যোগান সম্পূর্ণ অস্থিতিস্থাপক হয় বলে, ভূমিকে উৎপাদনের অস্থিতিস্থাপক উপাদান হিসেবে গণ্য করা হয়। অস্থিতিস্থাপক যোগান হলো, যে উপকরণের যোগান বৃদ্ধি পায় না। ফলে চাহিদা বাড়লে কোনো উপকরণের যোগান অস্থিতিস্থাপক হলে সর্বনিম্ন যোগান দামের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করে। অর্থাৎ জমির যোগান অস্থিতিস্থাপক বা সীমাবদ্ধ হওয়ায় চাইলেই এর পরিমাণ বৃদ্ধি করা সম্ভব না। এজন্য জমির চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় জমির মালিককে জমি ব্যবহারের জন্য অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করতে হয়। এরূপ বৈশিষ্ট্যের জন্যই ভূমিকে উৎপাদনের একটি অস্থিতিস্থাপক উপাদান হিসেবে গণ্য করা হয়।
উদ্দীপকে জামিল শেখের জমির আশেপাশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটায় তার জমির মূল্য কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় তার অনুপার্জিত আয় সৃষ্টি হয়। সাধারণত, অর্থনৈতিক উন্নয়ন তথা কোনো এলাকার শিল্প, কারখানা, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র ইত্যাদির উন্নতির ফলে সে এলাকায় জমির চাহিদা বেড়ে যায় এবং জমির মূল্য আগের চেয়ে বেশি হয়। এর ফলে জমির মালিকগণ অতিরিক্ত আয় ভোগ করে। কিন্তু এই বর্ধিত আয়ের জন্য তাকে অর্থ ব্যয় করতে হয় না। এভাবে জমির মালিক বিনা খরচ বা পরিশ্রমে যে অতিরিক্ত আয় ভোগ করে তাকে অনুপার্জিত আয় বলে। উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, জামিল শেখের ক্রয়কৃত ১০ কাঠা আবাদি জমির পাশ দিয়ে বাইপাস রোড তৈরি হয় এবং ঐ রাস্তার পাশ দিয়ে গ্যাস লাইন চলে গেছে। রাস্তাঘাটের উন্নতির ফলে ঐ এলাকায় এসিআই কোম্পানি একটি গবাদি পশুর খাদ্যের কারখানা স্থাপন করেছে। এতে তার জমির দাম কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এই সুযোগে তিনি অর্ধেক জমি (তথা ৫ কাঠা) ৪ লাখ টাকায় বিক্রি করে তিন বিঘা আমের বাগান কেনেন। অথচ তিনি সম্পূর্ণ জমি তথা ১০ কাঠা ৮০ হাজার টাকায় কিনেছিলেন। তার এই অতিরিক্ত আয় কোনো বিনিয়োগ ছাড়াই সৃষ্টি হয় এবং তা শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য হয়। তাই বলা যায়, কোনো প্রকার অর্থ ব্যয় না করেই জামিল শেখের অনুপার্জিত আয়ের সৃষ্টি হয়েছে।
উদ্দীপকে উল্লিখিত আম বাগান থেকে অর্জিত আয় রিকার্ডোর খাজনা তত্ত্বের সাথে সম্পর্কিত।
ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ ডেভিড রিকার্ডো মনে করেন, খাজনা হচ্ছে জমির মালিক ও অবিনশ্বর ক্ষমতার প্রতিদান। এ ক্ষমতা বলতে তিনি জমির উর্বরা শক্তিকেই নির্দেশ করেন। তার মতে, সব জমির উর্বরা শক্তি সমান নয়, এক্ষেত্রে উৎকৃষ্ট ও নিকৃষ্ট জমি রয়েছে। এর উৎপন্ন ফসলের পার্থক্যের ওপরই খাজনা নির্ভর করে। রিকার্ডোর মতে, যে জমির উৎপাদন খরচ ও আয় পরস্পর সমান সেরূপ জমিকে 'গাজনাবিহীন জমি' বা 'প্রান্তিক জমি' বলা হয়। সুতরাং বিভিন্ন প্রকার জমির উর্বরা শক্তির পার্থক্যের জন্য খাজনার সৃষ্টি হয়। এজন্য তিনি খাজনাকে 'উৎপাদকের উদ্বৃত্ত' বা 'পার্থক্যজনিত প্রাপ্তি' বলে অভিহিত করেন। উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, জামিল শেখ তিন বিঘা আমের বাগান থেকে আয় পায় যথাক্রমে ২৪,০০০ টাকা, ১৮,০০০ টাকা এবং ১২,০০০ টাকা। প্রত্যেক বিঘা জমিতে চাষের মোট ব্যয় ১২,০০০ টাকা। সুতরাং ১ম এক বিঘা জমির খাজনা (২৪,০০০ ১২,০০০) টাকা = ১২,০০০ টাকা। ২য় এক বিঘা জমির খাজনা = (১৮,০০০ ১২,০০০) টাকা ৩য় এক বিঘা জমির খাজনা = ৬,০০০ টাকা। (১২,০০০ ১২,০০০) টাকা = ০ টাকা। এক্ষেত্রে ১ম ও ২য় জমিতে যে পরিমাণ উদ্বৃত্ত সৃষ্টি হয় তাই হলো ওই সব জমির খাজনা। ৩য় জমিতে কোনো উদ্বৃত্ত না থাকায়, এ জমির কোনো খাজনা নেই; এটি প্রান্তিক বা খাজনাবিহীন জমি। তাই উদ্দীপকে প্রদত্ত তথ্যের আলোকে রিকার্ডোর খাজনা তত্ত্বটি বিশ্লেষণ করা যায়।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির দরুন জমির চাহিদা বৃদ্ধি পেলে এবং উন্নয়নমূলক কর্মসূচির কারণে অনুপার্জিত আয়ের উদ্ভব হয়। জনসংখ্যা বাড়ার কারণে যদি কোনো এলাকার জমির চাহিদা বেড়ে যায়, তবে সে এলাকার জমির মূল্য আগের চেয়ে বেশি হবে। আবার স্থানীয় কিংবা কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনাধীনে যদি কোনো এলাকার রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র, যোগাযোগ ব্যবস্থা, গুরুত্বপূর্ণ অফিস আদালত ইত্যাদি গড়ে ওঠে, তবে সে এলাকার জমির গুরুত্ব অনেকগুণ বেড়ে যায়। এতে জমির মালিকের অনুপার্জিত আয় সৃষ্টি হবে। এভাবেই জনসংখ্যা বৃদ্ধি অনুপার্জিত আয়ের সৃষ্টি করবে।